বর্তমান ইন্টারনেট ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

ইন্টারনেট বর্তমানে মানুষের ষষ্ঠ মৌলিক চাহিদা হলেও অন্যান্য ৫টা মৌলিক চাহিদার থেকে এর গুরুত্ব অনেক অনেক গুণ বেশি, কারণ এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান, সরকার, রাষ্ট্র ও সারা পৃথিবী উপার্জন করছে। 


দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ছাড়া কোন কাজই এখন হয়না। ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং, সোস্যাল মিডিয়া, রিক্রিয়েশন, শিক্ষা ব্যবস্থা সব কিছুই এখন ইন্টারনেট নির্ভর। 

বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ার ঘোষণা দেন এবং ২০২৩ সালে "স্মার্ট বাংলাদেশ" গড়ার ঘোষণা দেন। 

"ডিজিটাল বাংলাদেশ" ও "স্মার্ট বাংলাদেশ" গড়তে হলে ইন্টারনেট অত্যাবশকীয়। অথচ এই ইন্টারনেট নিয়ে আমাদের দেশে চলছে এক অরাজকতা অবস্থা। 

চীনে যখন কোভিড-১৯ শুরু হয় তখন তারা লকডাউন অবস্থায় চলে যায়। ইন্টারনেট প্রোডাক্ট এর ৯০% ই যেখানে চীন থেকে আসে সেখানে লকডাউন থাকার কারণে দেশের বাজারে হঠাৎ-ই দাম বাড়তে থাকে। 

এদিকে দেশে যখন কোভিড পরিস্থিতির কারণে লকডাউন দেয়া হয় তখন দেশে ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুণ, তার মাঝে দেখা দেয় ইন্টারনেট পন্যের ক্রাইসিস। 

ইন্টারনেট প্রোভাইডাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরুরি সেবার আওতায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে গেছেন। অথচ অনেক ব্যবসায়ীর এমন সময় গেছে অনেক গ্রাহকের বিল পায়নি, কিন্তু সংযোগ সচল রেখেছেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর শুরু হয় রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দা। সেই যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে সারা পৃথিবীতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলছে। 

সেই মন্দার বাতাস এই বাংলাদেশেও লেগেছে। ডলার ক্রাইসিস এর কারণে ডলার এর দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। সেই সাথে আমদানি নির্ভর ইন্টারনেট প্রোডাক্ট এর দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫% পর্যন্ত। 

বর্তমান সরকার ২০২১ সালে "এক দেশ, এক রেট" নির্ধারণ করে দেয়, সর্বনিম্ন ৫ এমবিপিএস ৫০০/-। আজ ২০২৩ সালে যেখানে ইন্টারনেট এর খরচ বেড়েছে প্রায়  ৪৫%, অথচ রেট বাংলাদেশে বাড়েনি ১ টাকাও। 

তার মাঝে রয়েছে অনেক প্রতিকুল অবস্থা, একজন লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সরকারের রেগুলেটরি কমিশনের নিয়মের বাইরে যেতে পারেনা। আর যদি যায়ও ধরা পড়লে শাস্তি পেতে হয়। 

কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে দেশে অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী গড়ে উঠেছে পাড়া মহল্লায়। এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা পারলে ৩০০/- টাকায়ও ইন্টারনেট দেয় যা নিয়মের বাইরে। কিভাবে দেয় সেটা আমার জানা নেই, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তার ব্যবসাতো থাকেইনা এবং পাশাপাশি প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের ও সরকারের রাজস্ব এর ক্ষতি করে দিয়ে যায়।

তার উপর তারা সরকার কে দেয় না কোন ট্যাক্স, ভ্যাট, লাইসেন্স ফি, এপনিক ফি। এতে করে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

আরো মজার বিষয় আছে একটা, তা হচ্ছে ফ্রী কানেকশন। এলাকার বাড়িওয়ালা, নেতা ও প্রভাবশালী লোকজন ফ্রী ইন্টারনেট চায়।

ব্যাপারটা এমন তাদের দিতেই হবে, তা না হলে হবেনা। সবার জ্ঞাতার্থে জানা প্রয়োজন ব্যান্ডউইথ কেউ বানায়না, এটা কিনে আনতে হয়, তার সাথে নানা রকম ফি, ইকুইপমেন্টস, ট্রান্সমিশন, ট্যাক্স, ভ্যাট, অফিস খরচ, কর্মীদের বেতন এবং অবশ্যই নূন্যতম লাভ যোগ করেই মূল্য রাখা হয়। 

পৃথিবীর কোথাও এই ফ্রী চেয়ে ইন্টারনেট চালানোর অভ্যাস নেই। একটা এলাকায় যদি ১০০ টা লাইন ফ্রী দিতে হয়, তাহলে হিসেব করে দেখা যায় নূন্যতম ৫০,০০০/- টাকা লস দিতে হচ্ছে। এর থেকে গ্রাহক ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষকেই বের হয়ে আসতে হবে। 

আবার আরেক শ্রেণীর লোক আছে, তারা বলেন যে তারা ইউরোপ - আমেরিকায় হাইস্পিড ইন্টারনেট চালায়, কিন্তু কত ডলার পে করে তা বলেনা। অথচ তাদের প্রদেয় বিল যদি ডলার বা পাউন্ড থেকে কনভার্ট করা হয় দেখা যাবে সেটা টাকার অংকে কয়েক হাজার টাকা। 

সরকারের প্রকৃত অর্থে "ডিজিটাল বাংলাদেশ" ও "স্মার্ট বাংলাদেশ" গড়তে হলে এবং পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও দেশের রাজস্ব বাড়াতে হলে কতগুলো পদক্ষেপ জোড়ালো ভাবে নিতে হবে।

পদক্ষেপ গুলো হলো:- 

১) অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

২) দেশে ইন্টারনেটের নূন্যতম গতি বাড়িয়ে ২০ এমবিপিএস-১০০০/- করতে হবে। তার মানে ২০ এমবিপিএস এর কোন ইন্টারনেট সংযোগ করা যাবেনা। 

৩) ফ্রী ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে হবে।

৪) পুনরায় লাইসেন্স আপগ্রেডেশন করার অপশন চালু করতে হবে।

৫) নিম্নমানের রাউটার আমদানি বন্ধ করে আইপি-৬ এনাবল রাউটার আমদানির অনুমোদন করতে হবে।

লেখকঃ মোঃ নাজমুল হক

একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী 

Post a Comment

0 Comments